রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগেও নারীরা নামাজের জন্য, দৈনন্দিন কাজের প্রয়োজনে, এমনকি জিহাদে অংশ নিতেও ঘর থেকে বের হতেন। তবে তারা বের হতেন আল্লাহর নির্দেশ ফরজ পর্দা মান্য করে এবং নবীজি (সা.)-এর নির্দেশিত সুন্নত পোশাক পরিধান করে। তাদের পোশাকের প্রধান বৈশিষ্ট্য— তা ফেতনা ছড়িয়ে দিত না, পুরুষদের প্রলুব্ধ করত না এবং তা নারীর প্রতি সম্মানবোধ বাড়িয়ে তোলে।
এজন্য নারীর বেশভূষায় পুরুষের মতো হতে চাওয়া নারীত্বের অপমান বলে মন্তব্য করেছেন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ। কারণ, মহান আল্লাহ যাকে নারী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন সেটাই তার জন্য সম্মানের। রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে এই ইসলামিক আলোচক মন্তব্য করেন।
তিনি লিখেছেন, পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে পোশাকের কালচার নেই। মহান আল্লাহ যেসব বিষয় দিয়ে মানুষকে অন্য প্রাণী থেকে স্বতন্ত্র করেছেন তার মধ্যে পোশাক অন্যতম। পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন- হে আদম (আ.) সন্তান! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি শরীর আবৃতকারী পোশাক এবং সৌন্দর্যপূর্ণ পোশাক (সুরা আরাফ: ২৬)। সুতরাং পোশাকহীনতা কিংবা পোশাক সংক্ষিপ্ত করার প্রবণতা মানবীয় স্বভাব হতে পারে না।
‘অনেকের কাছে পোশাক তেমন কোনো ইস্যু না হলেও মুসলিমের কাছে পোশাক অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অভিশপ্ত ইবলিশ মানবপিতা আদমকে (আ.) জান্নাত থেকে বের করতে (নিষিদ্ধ ফল খাইয়ে) শরীর থেকে জান্নাতি পোশাক খসিয়েছিল। আজও ইবলিশের দোসররা আল্লাহর নবি আদমের সন্তানদের পোশাক খুলে ফেলে জান্নাতে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করে ফেলতে চাইছে। মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।’
সুন্দর ও মার্জিত পোশাক পরিধানের নির্দেশ প্রদান করেছে ইসলাম। এমন পোশাক পরিধান করা যাবে না, যা পরিধান করলেও মনে হবে না যে, তার শরীরে পোশাক নেই। আবার এমন পাতলা পোশাকও পরিধান করা যাবে না, যা পরিধারন করার পরও মানুষের শরীর অঙ্গগুলো দেখা যাবে।
এ কারণেই ইসলামে আঁটসাঁট তথা টাইট-ফিটিং ও পাতলা পোশাক পরিধান করা নিষেধ। আর তা যদি মেয়েদের ক্ষেত্রে হয় তবে তা তো একেবারেই হারাম তথা নিষিদ্ধ। কারণ মেয়েদের জন্য পর্দা পালন করা ফরজ ইবাদত। হাদিসে এসেছে, ‘হাফসা বিনতে আবদুর রহমান (রা.) একটি পাতলা ওড়না পরে আয়েশা (রা.)-এর ঘরে প্রবেশ করলে তিনি তা সরিয়ে মোটা কাপড়ের ওড়না পরিয়ে দেন।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৬৬)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘এমন নারী যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ, যে নিজেও পথভ্রষ্ট এবং অন্যকে পথভ্রষ্ট করে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ পাঁচশ বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস : ১৬৬১)
ইসলাম ছেলে ও মেয়ে উভয়কে শালীন ও ভদ্র পোশাক পরিধান করার নির্দেশ দিয়েছে, বিশেষত যখন তারা সাবালক হয়ে উঠবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার আয়েশা বিনতে আবি বকর (রা.) পাতলা কাপড় পরিহিত অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এলে রাসুলুল্লাহ তার থেকে নিজের মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলেন, ‘হে আসমা, মেয়েরা যখন সাবালিকা হয়, তখন এই দুটি অঙ্গ ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ প্রকাশ করা তার জন্য সংগত নয়; এই বলে তিনি তার চেহারা ও দুই হাতের কবজির দিকে ইশারা করেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪১০৪)
পাঠকের মতামত